...

ডম্বুর বাঁধ – ভারতের বিনোদন লেক আর বাংলাদেশের জন্য মরণ ফাঁদ

ডম্বুর বাঁধটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এটি মূলত জগন্নাথ সাগরের ওপর নির্মিত একটি বাঁধ, যা রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সেচের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পর্যটন এবং মৎস্য চাষেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নিবন্ধে ডম্বুর বাঁধের ইতিহাস, নির্মাণ, কার্যক্রম, পরিবেশগত প্রভাব, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব, এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে।

ডম্বুর বাঁধের ইতিহাস ও নির্মাণ

ডম্বুর বাঁধটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে ত্রিপুরা রাজ্যের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রধান প্রকল্প হিসেবে। এই বাঁধটি গোমতী নদীর উপনদী জগন্নাথ সাগরের ওপর নির্মিত হয়, যা চারণী নদীর একটি শাখা হিসেবে প্রবাহিত হয়। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন, তবে এর পাশাপাশি কৃষি সেচ, মৎস্য চাষ, এবং স্থানীয় পর্যটনের বিকাশও এই প্রকল্পের একটি বড় দিক ছিল।

ডম্বুর বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৭৬ সালে এবং এটি সম্পন্ন হয় ১৯৮৩ সালে। বাঁধটি প্রায় ১১০ ফুট উচ্চতা এবং ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের। এটি একটি কৃত্রিম জলাধার তৈরি করেছে, যার আয়তন প্রায় ৪০ বর্গ কিলোমিটার। এই জলাধারটি স্থানীয় জনগণের কাছে “ডম্বুর হ্রদ” নামে পরিচিত এবং এটি ত্রিপুরার একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।


জলবিদ্যুৎ উৎপাদন

ডম্বুর বাঁধের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জলবিদ্যুৎ উৎপাদন। বাঁধের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা ত্রিপুরা রাজ্যের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বৃহৎ পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না, তবে এটি স্থানীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। ডম্বুর বাঁধের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় মূলত স্থানীয় অঞ্চলে, এবং এটি ত্রিপুরার গ্রামীণ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

কৃষি ও মৎস্য চাষ

ডম্বুর বাঁধের জলাধারটি স্থানীয় কৃষি এবং মৎস্য চাষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাঁধের পানি ব্যবহার করে স্থানীয় কৃষকরা সেচের কাজ করে থাকেন, যা তাদের ফসল উৎপাদনে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ত্রিপুরার মাটির উর্বরতা এবং বাঁধের সেচ সুবিধার কারণে এই অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ফসল, বিশেষ করে ধান, গম, এবং সবজি উৎপাদিত হয়। এছাড়া, এই জলাধারে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

পর্যটন বিকাশ

ডম্বুর বাঁধের জলাধার এবং তার আশেপাশের এলাকা পর্যটকদের জন্য একটি বড় আকর্ষণ। ডম্বুর হ্রদের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। এই হ্রদের তীরে স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র এবং অবকাশ যাপনের সুবিধা তৈরি করেছে। এছাড়া, হ্রদের মধ্যে নৌকাবিহার এবং মৎস শিকারও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। পর্যটন খাতের এই বিকাশ স্থানীয় জনগণের আয় বাড়াতে সহায়ক হয়েছে এবং ত্রিপুরার পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে।

ডম্বুর লেক এর বর্ননা

ডম্বুর লেক, যা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং প্রশান্তির এক অনন্য মিশ্রণ। এটি মূলত ডম্বুর বাঁধের ফলে সৃষ্ট একটি কৃত্রিম হ্রদ, যা ত্রিপুরার গোমতী জেলার অন্তর্গত। এই লেকটি ১৯৭০-এর দশকে নির্মিত হয়, যখন ডম্বুর বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল।

ডম্বুর লেকটি প্রায় ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এবং এটি বিভিন্ন ছোট ছোট দ্বীপ দ্বারা আবৃত। এই হ্রদটি আশেপাশের পাহাড়, ঘন বন, এবং সবুজে ঘেরা একটি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত। লেকের পানি শান্ত এবং স্বচ্ছ, যা প্রাকৃতিক দৃশ্যকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তোলে। লেকের পানি স্থানীয় নদী গোমতী এবং চারণী নদীর জল দ্বারা পূর্ণ হয়, যা বাঁধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।

ডম্বুর লেকের আশেপাশের এলাকা একটি সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল। লেকের মধ্যে এবং আশেপাশে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, জলজ প্রাণী, এবং উদ্ভিদের প্রজাতি পাওয়া যায়। বিশেষ করে, শীতকালে এখানে অনেক পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে, যা পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্য একটি বড় আকর্ষণ। এছাড়া, লেকের পানি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আবাসস্থল, যা স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহের একটি প্রধান উৎস।

ডম্বুর লেক ত্রিপুরার অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। এখানে পর্যটকদের জন্য নৌকাবিহার, মাছ ধরা, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে। লেকের বিভিন্ন দ্বীপে অবকাশ যাপন কেন্দ্র এবং পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, যা স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশে সহায়ক হয়েছে। পর্যটকরা এখানে এসে নৌকা ভ্রমণ, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ, এবং মৎস শিকার করে থাকেন।

পরিবেশগত প্রভাব

ডম্বুর বাঁধের নির্মাণ এবং এর ফলে সৃষ্ট জলাধার পরিবেশের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। বাঁধের কারণে বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং বহু বনাঞ্চল, কৃষি জমি, এবং গ্রাম ডুবে গেছে। ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধের কারণে স্থানীয় নদীর প্রবাহে পরিবর্তন এসেছে, যা পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হ্রদের পানি স্তরে পরিবর্তন আসছে, যা স্থানীয় বাস্তুসংস্থানকে প্রভাবিত করছে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

ডম্বুর বাঁধ নির্মাণের ফলে স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বাঁধের কারণে বহু লোক তাদের জমি এবং বসতি হারিয়েছে এবং তাদের নতুনভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। যদিও সরকার পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তবুও অনেক মানুষ এই ক্ষতিপূরণ পুরোপুরি পায়নি এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়নি। বাঁধের কারণে ত্রিপুরার স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। অনেক আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনযাপন প্রণালী পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তারা নতুন সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ডম্বুর বাঁধের মাধ্যমে ত্রিপুরা রাজ্যের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা হয়েছে, তবে এর সাথে কিছু চ্যালেঞ্জও এসেছে। বাঁধের কারণে পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাবগুলি মোকাবিলা করা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, এই বাঁধের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার এবং স্থানীয় সম্প্রদায় একত্রে কাজ করে ডম্বুর বাঁধের উন্নয়ন এবং পরিবেশ পুনরুদ্ধারে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া, পর্যটন খাতের বিকাশ এবং কৃষি ও মৎস্য চাষের উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতি সাধন সম্ভব।

ডম্বুর বাঁধ বাংলাদেশে বিরুপ প্রভাব

পরিবেশগত প্রভাব

১. নদীর প্রবাহে পরিবর্তন: ডম্বুর বাঁধের ফলে গোমতী নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়, যা সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর প্রবাহের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এই পরিবর্তন শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটের কারণ হতে পারে, যা বাংলাদেশের এই অঞ্চলে কৃষি ও মৎস্য চাষের জন্য ক্ষতিকর।

২. প্লাবন ভূমির ক্ষতি: বাঁধের কারণে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার প্লাবন ভূমির প্রাকৃতিক প্রবাহে পরিবর্তন এসেছে। ফলে এই অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষিজমির উর্বরতা কমে গেছে।

৩. জলবায়ু পরিবর্তন: বাঁধের কারণে স্থানীয় জলবায়ুতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। মাটি এবং পানি ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব পড়েছে, যা কৃষি ও স্থানীয় জীববৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অর্থনৈতিক প্রভাব

১. কৃষি উৎপাদনে প্রভাব: ডম্বুর বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব দেখা দিতে পারে, যা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। এই অঞ্চলে ধান এবং অন্যান্য ফসলের উৎপাদনে বাঁধের প্রভাব উল্লেখযোগ্য হতে পারে।

২. মৎস্য চাষে প্রভাব: নদীর প্রবাহে পরিবর্তনের ফলে মাছের প্রজাতির প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের মৎস্য চাষ এবং জেলেদের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

সামাজিক প্রভাব

১. জনসংখ্যার স্থানান্তর: বাঁধের কারণে পানির স্তর ও নদীর প্রবাহে পরিবর্তন এসেছে, যা স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রা প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত মানুষদের জীবিকা ও পানির উৎসে সমস্যা দেখা দিয়েছে, যা তাদেরকে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করেছে।

২. জীবিকা নির্বাহের চ্যালেঞ্জ: পানি প্রবাহের কমে যাওয়া এবং কৃষি ও মৎস্য চাষের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে স্থানীয় জনগণ জীবিকা নির্বাহে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

২০২৪ সালে বাধঁ খুলে দেয়ার ফলে বাংলাদেশে বন্যা দেখা দেয়

ডম্বুর বাঁধের স্লুইসগেট খুলে দেয়ার ফলে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় ১৫টি জেলার ৫০ লাখের উপর মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয় । ২০২৪ সালে আগষ্ট মাসে মাঝামাঝি ডম্বুর বাঁধ থেকে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাংলাদেশে বন্যার কারণ হয়েছে। এই প্রভাবের মূল কারণ এবং এর ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিচে বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:

কারণ ও প্রভাব

১. অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও বাঁধের স্লুইসগেট খোলা

২০২৪ সালে আগষ্ট মাসের প্রথম দিকে ত্রিপুরা রাজ্যসহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়। ফলে ডম্বুর বাঁধের জলাধারে পানি স্তর  বেড়ে যায় ।  ভারতের মতে বাঁধের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ কে কোন সতর্ক বার্তা না দিয়েই বাঁধ খুলে দেয় । বাঁধের স্লুইসগেট খুলে দেয়ার ফলে বাঁধ থেকে বিশাল পরিমাণ পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়।

২. নদীর পানি স্তর বৃদ্ধি

বাঁধ খুলে দেয়ার ফলে গোমতী নদীর পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা পরবর্তীতে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি স্তরে ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটায়। এই নদীগুলি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রবাহিত হয়, এবং বাঁধ থেকে আসা অতিরিক্ত পানির কারণে নদীগুলির তীরবর্তী অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়।

৩. কৃষি জমির ক্ষতি

বন্যার ফলে কৃষিজমি ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ , সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার  জেলার বহু কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে রবি ফসল এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা স্থানীয় কৃষকদের জন্য বিরাট সমস্যা তৈরি করেছে।

4. জনজীবনে বিপর্যয়

বন্যার কারণে 50 লাখের বেশী মানুষ গৃহহীন হয়েছে এবং তাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। বসতবাড়ি, সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং লোকজনের মধ্যে খাদ্য, পানীয় জল, ওষুধ এবং নিরাপদ আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

৫. স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি

বন্যার পানি দাঁড়িয়ে থাকার ফলে বিভিন্ন ধরনের জলবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়েছে। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন, তবে অনেক এলাকায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

সমাধানমূলক পদক্ষেপ

এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশের সরকারের মধ্যে আরও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বিশেষ করে, বাঁধ পরিচালনার জন্য কার্যকর একটি পূর্বাভাস ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার, যাতে বন্যা এড়ানো যায় এবং উভয় দেশের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়।

১. অগ্রিম সতর্কতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

দুই দেশের মধ্যে বাঁধ পরিচালনা এবং পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি যৌথ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এতে করে বাংলাদেশ আগাম সতর্কবার্তা পাবে এবং বন্যার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

২. বন্যা নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো উন্নয়ন

বাংলাদেশে সুরমা এবং কুশিয়ারা নদীর তীরে আরও কার্যকরী বাঁধ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো তৈরি করা দরকার, যাতে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হলেও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়।

৩. ত্রাণ ও পুনর্বাসন

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। খাদ্য, পানীয় জল, ওষুধ এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে বন্যা কবলিত মানুষদের দ্রুত সহায়তা করা জরুরি।

ডম্বুর বাঁধ ত্রিপুরা রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ জল প্রকল্প, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন, কৃষি, মৎস্য চাষ, এবং পর্যটন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে, এর পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাবগুলি নিয়ে চিন্তার অনেক দিক রয়েছে। বাঁধের নির্মাণ এবং তার প্রভাব সম্পর্কে আরও গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে স্থানীয় জনগণের কল্যাণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। ভবিষ্যতে, ডম্বুর বাঁধ ত্রিপুরা রাজ্যের উন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারে, যদি এর সমস্ত দিক বিবেচনা করে এবং যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।